কক্সবাজারের খুরুশকুলে ৭ রাখাইন পরিবারের ৩৫ থেকে ৪০ সদস্য এলাকা ছাড়া করেছে অপর এক রাখাইন প্রভাবশালী গ্রুপ। দীর্ঘ সাড়ে ৫ মাস ধরে এসব পরিবার শহরের বিভিন্ন এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে বসবাস করে আসলেও এখনো ফিরতে নিজ বাড়িতে ফিরতে পারেননি। তাই, সম্মান, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ও নিরাপদে বাড়ি ফিরতে সংবাদ সম্মেলন করেছে।
বুধবার বেলা সাড়ে ১১টারদিকে কক্সবাজার প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেন তারা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন মং মং। এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, আবুরী, মংপ্রু, মংক্যএ, চ চা, অংথেন প্রু, চেন থেন উ, মং প্রুরী।
সংবাদ সম্মেলনে আরও অভিযোগ করা হয়, কক্সবাজার সদর খুরুস্কুল রাখাইন পাড়ায় একমাত্র বৌদ্ধ মন্দিরের অধক্ষ্য উ শাসন বংশ কিন্তু এর প্ররোচনায় কিছু উগ্র দুর্বৃত্তেরদল এবংতার কয়েক আত্মীয়স্বজন সন্ত্রাস রাজত্ব কায়েমের মাধ্যমেগ্রাম থেকে আমাদের ৭টি পরিবারকে ২০২১ সালের ২৭ অক্টোবর থেকে আমরা বিতারিত হয়ে আজ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জেলায় উদ্ভান্ত ন্যায় অত্যন্ত মানবেতর জীবনঅতিবাহিত করতে বাধ্য হচ্ছ। এরই ধারাবাহিকতায় বাড়ি গুলোতে বার বার হামলা করে মূল্যবান জিনিষপত্র লুট করে নিয়ে গেছে চিহ্নিত উক্ত দুর্বৃত্তের দল। আমরা প্রতিকারের আশায় বিভিন্ন জায়গায় ধরনা দিয়েও কোন প্রতিকার পাননি।। অন্যদিকে দুর্বত্তরা দুই গুন উৎসাহ হয়ে আমাদেরকে গ্রাম থেকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। এমনকি উক্ত এলাকা থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর থেকে বাবা, মা ও কেউ মারা যাওয়ার পর সৎকারের অংশগ্রহন তো দুরের থাক মৃত মায়ের মুখ শেষ যারের পর্যন্ত দেখতে দেয়া হয়নি।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ওই এলাকায় রাখাইন পাড়ায় অবস্থিত একটি সমবায় সমিতির মালিকানাধীন ২০ শতক জমি উ শাসন ভিক্ষুর নামে হস্তান্তরে দাবী জানাই। তাদের দাবী মেনে না নিলে আমাদেরকে সমাজচ্যুত করে গ্রাম ছাড়া করা হবে। প্রায় ৭/৮ মাস আগে সন্ধ্যা নেমে আসার সাথে সাথে প্রতিদিন তারা আমাদের বাড়িগুলোর উপর বৃষ্টির মতো পাথর নিক্ষেপ করতে থাকে যা প্রমানস্বরুপ আমাদের কাছে অডিও রেকর্ডিং, স্থির চিত্র সংরক্ষিত আছে।
গ্রামের কিছু সমাজ সচেতন নারী পুরুষ গ্রামের সার্বিক কল্যানের উদ্দেশ্যে একটি সমবায় সমিতি গঠন করে এবং ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সমিতির নিজস্ব তহবিলের টাকায় ১৯৯৮ সালে আমান উল্লাহ গং হতে ২০ শতক জমি ক্রয় করে এবং ৬৬১ কবলা করত্ব সমিতির নামে ১০৮২৬ নং সৃজিত খতিয়ান করা হয়। উক্ত জমিতে বিভিন্ন সামাজিক, ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান আয়োজন করে আসছে। কিন্তু জমির দলিল উক্ত গ্রামের বৌদ্ধ মন্দিরের অধ্যক্ষ ভান্তে উ শাসন বংশ এর কাছে রক্ষিত ছিল এবং পরিবর্তিতে ভান্তের সহযোগীতায় তাঁর এক আত্মীয় জমিটি রেজিস্ট্রির নাম পরিবর্তন করতে অনৈতিক চেষ্টা করে। কিন্তু জমিটির মালিক নির্দিষ্ট কারোর ব্যক্তি বিশেষের নামে বা কারোর উত্তরধীকার সুত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি না হাওয়ায় তা করতে সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে ভান্তের পরামর্শে তাঁর কয়েকজন আত্মীয় এবং এলাকার কিছু লোকজন মিলে সমিতির পরিবারগুলোকে মন্দির এবং শ্মশানে প্রবেশে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করে। রাতে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে মাসের পর মাস মানসিক ও শারিরীক নির্যাতন করতে থাকে। তারা এও ঘোষনা করে, কেউ যদি সমিতি সদস্যদের হয়ে কথা বললে তাকেও মন্দিরচ্যুত এবং গ্রামচ্যুত করা হবে।
উল্লেখ্য যে, উক্ত সমিতি কক্সবাজার উপজেলা সমবায় অধিদপ্তর কর্তৃক নিবন্ধিত যার নং। ২৫৬৪ তারিখ ১/৪/২০২১, সমিতির গঠন করার সময় সমিতির নাম ছিলখুরুস্কুল রাখাইন পুরুষ ও মহিলা সমিতি কিন্তু উক্ত সমিতির নামে নিবন্ধন লাভের জন্য কক্সবাজার উপজেলা সমবায় দপ্তরে আবেদন করলে সমবায় সমিতি বিধিমালা ২০০৪ (সংশোধন ২০২০) সমিতির ৩৫টি প্রকারভেদেও মধ্যে না থাকার কারণে আবেদীত নামে নিবন্ধন পাওয়া সম্ভব হয়নি কিন্তু সমবায় দপ্তরেপরামর্শে সমবায় সমিতি বিধিমালা/২০০৪ (সংশোধন ২০২০) এর ৩ (১৭) বিধির আলোকে খুরুস্কুল জালিয়া পাড়া রাখাইন সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতি লিঃ নামে সমবায় অধিদপ্তর জেলা সমবায় কার্যালয়, কক্সবাজার কর্তৃক নিবন্ধন প্রাপ্ত হয় যার নিবন্ধন নঘও ২৫৬৪ তারিখ ১/৪/২০২১।
আইনি প্রথায় জমির মালিকানার স্বত্ব কোনভাবে হস্তান্তর করা সম্ভব না হাওয়ায় গত ২৭/৯/২০২১ তারিখে মে নং এর ছেলে মংসাইঅং প্রকাশ বারিসে, মত চিং খোইন ছা এর ছেলে কা হ্লাচিং, মৃত উচিং মং এর ছেলে মতো ওয়ে, মৃত চিৎক্য এর ছেলে মেসাং, চেন ছিং থেইন এর ছেলে উসাং প্রঃ বাবু, ওয়ানচেন, সাং মং এর স্ত্রী ফু মা সে নেতৃত্বে বেআইনি জনসমাগম ঘটিয়ে সমিতির সংশ্লিষ্ট ৭ টি পরিবারের উপর সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। এর পূর্ববর্তীতে উক্ত ভান্তে ঘোষনা করেন যে, জমির স্বত্ব আইনি বা বেআইনি যেভাবে হোক হস্তাতর তার নামে করা না হলে সমিতির সংশ্লিষ্ট সবাইকে সমাজচ্যুত করা হবে এবং উনি সেটাই করেছেন। এমনকি মা মারা যাওয়ার পর সৎকারের অংশগ্রহনতো দুরের থাক মৃত মায়ের মুখ শেষ যারের পর্যন্ত দেখতে দেয়া হয়নি
এর কয়েকমাস আগে মংত্যু ওয়ে এর ছেলে উছা চিংমং বালাইন, চিং থোইন হ্রা এর ছেলে মং ক্য হ্রাইন সহ আরো কয়েকজন সমিতির জমিতে স্থাপিত প্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দরজা ভেঙ্গে অফিসের কাগজপত্র তছনচ করে আসবাবপত্রসহ মূল্যবান জিনিয়পত্র ভেঙ্গে ফেলে এবং স্কুল কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে স্কুল শিক্ষককে হুমকি দেয়। এবং সেদিন থেকে স্কুল কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। আরও উল্লেখ্য যে, উক্ত বিদ্যালয়ে গ্রামের একমাত্র বৌদ্ধ মছিরে অধক্ষ্য উ শাসন বংশও একজন নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষক ছিলেন কিন্তু নিয়মিত বেতন নিলেও সপ্তাহের অধিকাংশ দিন অনুপস্থিত থাকতেন। স্কুলে প্রধান শিক্ষক স্কুলের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়ার ভয়ে উনার বিরুদ্ধে কোন টু শব্দ করতে সাহস হয়নি” কারন গ্রামের উনার কথায় সবাই উঠ বস করে।
প্রকৃতপক্ষে সমিতি গঠন করা হয়েছিল ১৯৯১ সালে এবং ১৯৯৮ সালে জনাব আমানুল্লাহ গং হতে জমিটি ক্রয় করা হয়েছিল। কিন্তু সদ্য গঠিত তথাকথিত সমাজ পরিচালনা কমিতির সদস্যদের বয়স তখন ১০/১২ বৎসরে শিশু ছিল বা কারো কারো জন্যও হয়নি। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে কিভাবে তারা দাবী করছে যে জমিটি তাদের টাকায় কেনা? যদি গ্রামবাসীদের টাকায় কেনা হয়ে থাকতো তাহলে জমিটি২৫ বছর তাদের নামে না হয়ে কিভাবে সমিতির নামে হলো?
তারা হামলা পর বিভিন্ন জায়গায় বলে বেড়াচ্ছেন যে, আমরা নাকি অপরিচিত লোকদেরকে গ্রামে পাঠিয়ে আমাদের নিজেদের বাড়িঘর ভাংচুর করেছি। তাদের কথাগুলোর মাধ্যমে প্রমান করে যে, বাড়িঘগুলোতে হামলা, ভাংচুর এবং লুটপাটের ঘটনা এবং গ্রাম থেকে বিতারনের ঘটনাটি সত্য এবং তারা স্বীকার করে নিয়েছেন।
উক্ত জমিটি নারী ও পুরুষ সমিতির কর্তৃক ক্রয়কৃত। জমির কবলায় আবুরি এবং আমারির নাম এসেছে শুধুমাত্র সমিতির সভাপতি এবং সম্পাদক হওয়ার সুবাদে। প্রকৃতপক্ষে, জমির মালিক সমিতি। আবুরি আমারির নাম উল্লেখ থাকলে ও তারা শুধুমাত্র সমিতির প্রতিনিধি এবং তারা ইচ্ছা করলেও জমির স্বত্ব হস্তান্তর বা বিক্রি করার আইনত অধিকারী নন।
বর্তমানে গ্রামচ্যুত অসহায় এই পরিবারগুলো জেলার বিভিন্ন জায়গায় আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধবদের বাড়িতে উদ্বান্ত মানবেত জীবন কাটাচ্ছে। তাদের নিত্য রুজি রোজগারের পথও এখন সম্পূর্নভাবে বন্ধ রয়েছে। তাই এই হীন জগন্য বর্বর সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে শাস্তি দাবি জানিয়ে আক্রান্তদের যার যার বাড়িতে ফিরে গিয়ে নিরপত্তা নিয়ে শান্তিতে যেন বসবাস করতে পারে সেই ব্যবস্থা করে দেয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।
ভয়েস/আআ